Thursday, April 22, 2010

রাজশাহী ও নওগায় ভূমিতে ফাটল, কিসের আলামত?

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছা ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় আকস্মিক ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ষোল ও সতেরো এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে। এর দু,দিন পরই নওগার সাপাহারউপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমিতে আকস্মিক ফাটল সৃষ্টি হয়। দু,টি ফাটলই প্রস্থে প্রায় দেড় ফুট পর্যন্ত এবং গভীরতায় প্রায় ত্রিশ ফুট পর্যন্ত দেখা গেছে। ওই দুই এলাকার মানুষজন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তি ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা মাটির তলদেশে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণেই এমনটি হয়ে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা অদূর ভবিষ্যতে এখানে বড় ধরনের কোন বিপর্যয়ের আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
এই নিয়ে বিস্তারিত খবর পড়ুন।

মোহনপুরে আকস্মিক ফাটল আতঙ্কে ২৫ পরিবার

প্রথম আলো

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় আকস্মিক ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকদের তথ্যমতে, আমবাগান, উঁচু ভিটা ও বাড়িঘরের ভেতরে সৃষ্ট এ ফাটলের গভীরতা সুনির্দিষ্টভাবে মাপা না গেলেও কোথাও কোথাও তা চার-পাঁচ ফুটের মতো। ফাটলের প্রস্থ দুই ইঞ্চি থেকে দুই ফুট। এতে গ্রামের ২৫টি পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
গতকাল রোববার নওপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বারনই নদীর ধারে আমবাগানে ফাটল দেখতে মানুষের ভিড়। নদীর প্রায় দেড় শ গজ পশ্চিমে ওই আমবাগান থেকে ফাটল শুরু হয়ে তা গ্রামের বসতঘর পর্যন্ত বিস্তৃত। ফাটলের পাশে রয়েছে আকবর আলীর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী ফুলসুরা বেগম (১৮) জানান, শুক্রবারও ফাটলের প্রস্থ খুবই কম ছিল। শনিবার সকালে সেই প্রস্থ আরও বেড়েছে। গ্রামের বাসিন্দা নূর আলম বলেন, তাঁর চাচা আকবর ও আবদুল হান্নান গত শনিবার সকাল আটটার দিকে হঠাৎ একটি শব্দ শোনেন। তার পরপরই ফাটলটি দেখা যায়। আবদুল হান্নান বলেন, ফাটল অংশে নামার পর প্রথমে এর গভীরতা বুক সমান মনে হয়েছিল।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, সাধারণত কোনো জায়গায় মাটির সংযুক্তি ক্ষমতা হারালে এমন ফাটল তৈরি হতে পারে। আবার মাটির নিচে পিট (নিম্নমানের কয়লা) থাকলেও এমনটি হতে পারে।  

সাপাহারে ভূমিতে ফাট, এলাকাবাসীর নির্ঘুম রাত কালের কণ্ঠনওগাঁর সাপাহার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমিতে আকস্মিক ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় এলাকাবাসীর শঙ্কা এখনো কাটেনি। তাঁরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সাপাহার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বরেন্দ্র ভূমির পাতারি ইউনিয়নের শিমুুলডাঙ্গা, রামাশ্রম গ্রামের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে প্রায় অর্ধকিলোমিটার এলাকায় আকস্মিক ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গ্রাম দুটির পশ্চিমে তিন কিলোমিটার দূরে পুনর্ভবা নদী আর পূর্বদিকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে জবই বিল। সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রাম দুটি সাপাহার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দুটি গ্রামের ১৪-১৫টি বাড়ির দেয়াল ও উঠানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল সৃষ্টি বাড়ির মালিক আ. হামিদ, গ্রামবাসী জাহাঙ্গীর, আ. মতিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, ঘটনার রাতে ঝড়- বৃষ্টি চলছিল। রাত ৯টার দিকে অকস্মিক পটপট শব্দে ঘরের দেয়াল ও মেঝে ফাটতে থাকে। ঝড়ের মধ্যেই তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বেরিয়ে পড়েন। শুরুতে ফাটল ছিল প্রায় একহাত চওড়া। গত তিন দিনে ফাটলের প্রশস্থতা প্রায় অর্ধেক কমে এসেছে। সকালে তাঁরা তাঁদের বাড়ি ও গ্রামের রাস্তার মধ্যে আঁকাবাঁকা ফাটল দেখতে পান। আ. হামিদ বলেন, 'ফাটলের মধ্যে আমি ২০-২৫ ফুট লম্বা একটি বাঁশ ছেড়ে দিলে সম্পূর্ণ বাঁশটি গর্তের মধ্যে ঢুকে যায়। ঘটনার পর থেকে গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে আগের চেয়ে পানি কম উঠছে। ফাটল পুকুর, বাড়ি, বাঁশঝাড়, ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে চলে গেছে।' শিমুলডাঙ্গা গ্রামের আবদুল মতিন বলেন, 'এখন সারা মাঠে ধান। ধান কাটা শেষ হলে জানা যাবে ফাটল কত দূর পর্যন্ত গেছে।' রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল বলেন, নদী-পার্শ্ববর্তী এলাকায় দীর্ঘদিনের জমে থাকা কাদা-পলি সরে যাওয়ার কারণে ভূপৃষ্ঠে ফাটল ধরতে পারে। কখনো কখনো খুব বসতিপূর্ণ এলাকায় এটি বসে যেতে পারে এবং ওই এলাকার মানুষের জন্য ঝুঁকির আশঙ্কা আছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভের অনেক ধরনের বিচ্যুতি আছে।

No comments:

Post a Comment