Saturday, February 13, 2010

নোনা পানিতে নতুন ধান চাষ

new rice


নোনা মাটিতে নতুন ফসলের হাসি৻
বাংলাদেশের উপকূলের পুরোটা জুড়ে উপকূল জুড়ে খাবার জল আর কৃষি জমিতে লবনের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে৻ তবে নোনা পানির এই দূর্যোগের সাথে খাপ খাওয়াতে নতুন এক প্রজাতির ধান চাষ কিছুটা স্বস্তি আনছে খুলনা, সাতক্ষীরার লবন প্রবন এলাকায় কৃষকদের মধ্যে৷ 
হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা পর্যন্ত পুরো উপকূল জুড়ে কৃষকদের কন্ঠে উদ্বেগ: সেখানকার পানিতে আর জমিতে লবন বাড়ছে৷ বাংলাদেশের উপকূলে ঝড়ড়ঝঞ্জার প্রকোপে যত বেশী বাঁধ ভাঙছে, বা বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে, লবনাক্ততা নিয়ে ততই বেশী আতঙ্কিত হচ্ছেন ঐ এলাকার কৃষকরা৷
নদী বিশেষজ্ঞ ড আইনুন নিশাত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কৌশল তৈরীতে বাংলাদেশ সরকারের একজন শীর্ষ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন৷
তিনি বলছেন, “আমরা বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজী এ্যান্ড এ্যাকশন প্লানে বলছি, যে প্রাথমিক ভাবে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়বে, তারপরে জমিতে লবণাক্ততা বাড়বে৻
harvest

‘‘যে পানিটা এখন বাঁধের বাইরে উঁচু হয়ে আছে, টপকে হয়তো বাঁধের ভেতরে ঢুকছে না কিন্তু একেবারে সাথে লেগে রয়েছে৻ সেই পানি বিশ বছর আগে মিঠা পানি ছিল৻ অর্থাৎ বাঁধের ভেতরে চুইয়ে প্রবেশ করলেও, সেটি মিঠা পানিই ছিল৻‘‘ তিনি বলছেন, ‘‘এখন অনেক জায়গাতেই বাঁধের সাথে লাগোয়া জমি একবারে লবণাক্ত হয়ে গিয়েছে৻``
সাতক্ষীরা শহরের উপকন্ঠে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিস্টিটিউট বা বিরির একটি গবেষনা খামারে নতুন একটি লবন সহিষ্ণু ধানের বীজতলা তত্বাবধান করছেন বিরির আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান, ড. তাহমিদ হোসেন আনসারি৷
নোয়াখালী বা হাতিয়ার চাষীরা এখনও হয়ত জানেন না, কিন্তু পাঁচ বছর গবেষনার পর, ২০০৭ এর বোরো মৌসুম থেকে বি-আর ৪৭ নামের এই ধানটি খুলনা সাতক্ষীরায় কৃষক পর্যায়ে চাষ শুরু হয়েছে৻
ড. আনসারি বলছেন, এখন এই ধানের চাষ সাতক্ষীরাসহ অনেক জায়গাতে রয়েছে৻ এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার কৃষকের কাছে এই বীজ পৌঁছে দেয়া গেছে৻
তিনি জানান, “আমরা বলি না যে বি-আর ৪৭ লবণ সহিষ্ণু বলে প্রবল লবণাক্ত এলাকাতেও এটি ফলবে৻ আমরা বলছি প্রচলিত আধূনিক ভ্যারাইটির যে ধানগুলো এখানে রয়েছে, যেমন এখানকার বিরি-২৮ ধান, তার চাইতে বি-আর ৪৭ স্বাভাবিকভাবে ফলন দেবে৻
‘‘মধ্যমাত্রার লবণ রয়েছে যে জমিতে সেখানে এটি হতে পারে৻ কৃষকরা গড়ে প্রতি হেক্টরে ৬ টন করে এর ফলন পাচ্ছেন৻``
প্রাকৃতিক কারনের পাশাপাশি জমিতে লবন পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের কারনেও পুরো উপকুলীয় অঞ্চলে বহু জমি ধান চাষের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে৷
new rice

পড়তি বাজার এবং নতুন নতুন রোগের উপদ্রবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের অনেক চিংড়ি চাষী এখন ধান চাষে ফিরতে চাইছেন৷
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বান্দিকাঠি গ্রামের একজন কৃষক ইব্রাহিম খলিল ৷ গত বোরো মৌসুমে সাহস করে তাঁর চিংড়ির ঘেরের তিন বিঘা জমিতে বি-আর ৪৭ চাষ করেছিলেন৻
তিনি বলছেন, এবার বি-আর ৪৭য়ের ফলন বেশ ভালো হয়েছে৻ বিঘা প্রতি তের মন করে ধান হয়েছে৻ চারপাশে লবণাক্ত পানির মধ্যে এই ধানের ফলন এতই ভাল হয়েছিল যে উৎসব করে সেই ধান কাটা হয়েছিল৻
ড. নিশাত বলছেন, বাংলাদেশের উপকূলে যে সমস্ত এলাকায় বাঁধ রয়েছে তার উজানে, যেমন বরিশাল, ঝালকাটি, শরীয়তপুরের মতো অঞ্চলে, কোন বাঁধ নেই৻ কিন্তু এখন থেকে পঞ্চাশ বছর পরে যখন পানির উচ্চতা দুই ফুট, বা একশো বছর পরে তিন/চার ফুট বেড়ে যাবে তখন ঐসব এলাকার নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে পড়বে৻
কাজেই এব্যাপারে তাঁর সুপারিশ: নোনা পানির বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে৻ সরকারের ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজী এ্যান্ড এ্যাকশন প্লানে এ বিষয়ে লক্ষ্যমালা রয়েছে৻
ধেয়ে আসা এই লবনের মোকবেলায় কার্যকরি ব্যাবস্থাপনার যে কথা ড আইনুন নিশাত বলছিলেন, তার প্রধান একটা চ্যালেঞ্জ হবে কত দ্রুত বি-আর ৪৭ এর মত লবন সহিষ্ণু ফসল কৃষক পর্যায়ে পৌছানো সম্ভব৷

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা

No comments:

Post a Comment