জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত কারণে বর্তমানে বছরে সারা বিশ্বে মারা যাচ্ছে তিন লক্ষ মানুষ। জাতিসংঘের ভূতপূর্ব মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন গ্লৌবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফৌরামের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন-সূত্রে জানা যাচ্ছে এ-তথ্য। সংস্থার পক্ষ থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘নীরব সঙ্কট’ হিসাবে চিহ্নিত করে সংস্থাটি জানিয়েছে প্রাণহানির ঘটনা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতিতে বড়ো-ধরণের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন দুনিয়া-ব্যাপী মিলিয়ন-মিলিয়ন মানুষ।
প্রতিবেদন-মতে, জলবায়ু পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে, তার ফলে আগামী দু’দশকের মধ্যেই সারা-বিশ্বের কমপক্ষে ছয়শ মিলিয়ন মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন; এ-সংখ্যাটি বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। জানা যাচ্ছে যে, জলবায়ু বিপর্যয়-জনিত কারণে গরীব দেশগুলোর মানুষ-জনই মূলতঃ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করে কফি আনান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি আমাদের সময়ে উদ্ভূত সবচেয়ে বড় চ্যালেইঞ্জ’।
প্রতিবেদনে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত কারণে বর্তমানে যতো মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার মধ্যে ৯০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন উষ্ণতা-বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কারণে। এসব কারণের মধ্যে আছে অপুষ্টি, ডায়রিয়া ও ম্যালেরিয়া।
গ্লৌবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফৌরামের হিসাব-মতে, জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত কারণে বর্তমানে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে আনুমানিক ১২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ক্ষতির এ-অঙ্ক ‘উন্নয়নশীল’ সবগুলো দেশ প্রতি-বছর সর্বমোট যে-আর্থিক সাহায্য পায়, তার চেয়েও বেশি। ২০৩০ সাল নাগাদ ক্ষতির এ-অঙ্ক বর্তমানের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেড়ে ৩৪০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া উল্লেখিত সময়-কালে জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত কারণে বছরে অর্ধ-মিলিয়ন মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রাণহানির ৯৯ শতাংশই ‘উন্নয়নশীল’ দেশগুলোতে। আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানা গেছে প্রতিবেদন-সূত্রে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের ব্যাপারে ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে কফি আনান জানান এ-সব দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত সমস্যাটিকে ‘দূরবর্তী’ এক পরিবেশগত সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন মানুষের পরিবর্তে হিমবাহ আর মরু ভল্লুকের উপরে জলবায়ু পরিবর্তনের চিত্রই যেন বেশি দেখা যাচ্ছে বর্তমানে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব জানান, জলবায়ু বিপর্যের ফলে দায় কম থাকা সত্ত্বেও দরিদ্র দেশগুলো মূল ভূক্তভোগী হলেও, ধনী দেশগুলো কোনোভাবেই বিপদমুক্ত নয়। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত কারণে ধনী দেশগুলোতে খরা, দাবানল আর বন্যার প্রকোপ ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে বিভিন্ন দেশে। গ্লৌবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফৌরাম মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত বিপর্যয় রোধের জন্য যা কিছু করণীয়, তা করার ক্ষেত্রে ‘দুর্বল’ ভূমিকা পালন করছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
< লেখাটি ইউকেবেঙ্গলি থেকে সংগৃহীত >
No comments:
Post a Comment