Saturday, February 13, 2010

অজানা আশংকায় দ্বীপের জীবন

shoal

বঙ্গোপসাগরের কোলে ছোট দ্বীপগুলির নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি৻
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে সব জনপদের, তার প্রথম সারিতে রয়েছে মেঘনার মোহনায় ছোট, মাঝারি দ্বীপগুলো৷ কিন্তু ধেয়ে আসা এই দূর্যোগের জন্য তাদের দায় কতটুকু ?

লম্বাটে নিঝুম দ্বীপের দু‘প্রান্তে দুটো বাজার৷ এর একটির নাম: নামার বাজার৷ কাগজের তৈরী চোঙ্গা মুখে পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল হাদি জানিয়ে দিচ্ছিলেন পরদিন হাতিয়ামুখী ইঞ্জিনের নৌকো ছাড়ার সময়সূচী৷ নিজের পরিচয় দিলেন সাংবাদিক হিসেবে৻
নিঝুম দ্বীপের সবার কাছে তিনি হাদু ভাই নামে পরিচিত৷ ২২ বছর ধরে রাস্তায়, বাজারে চোঙ্গা ফুঁকে দ্বীপের মানুষদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন হাদু ভাই৷ পায়ে হেঁটে তাকে এ কাজ করতে হয়, কারণ নিঝুম দ্বীপে কোন পাকা রাস্তা বা গাড়ী নেই৷
দ্বীপে বাজার সদাই, মেলা মেশা, দেখা শোনার প্রধান কেন্দ্র এই নামার বাজার৷ চায়ের দোকানে আড্ডা, ইঁদুর মারার ওষুধের ক্যানভাসার -- সব মিলিয়ে মনেই হচ্ছিল না একদিকে মেঘনা আর তিনদিকে সাগর ঘেরা সাত/আট কিলোমিটারের সরু এক চিলতে দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ৻
solar
দোকানে সৌর বিদ্যুত
নামার বাজারে ৩০/৩৫ টি টিনের চালার ছোট বড় দোকান৷ তিন-চার বছর আগেও হয় হ্যারিকেন নেয় ডিজেলে চালানো জেনারেটরে বাতি জলত এসব দোকানে৷ এখন ৭৫ শতাংশ দোকানেই সৌর বিদ্যুত৷
এরকমই একজন সৌর বিদ্যুত ব্যবহারকারী বলছিলেন তিনি মোট চারটি বাতি ব্যবহার করছেন দেড় বছর ধরে৻ এর আগে তিনি জেনারেটর দিয়ে বাতি জ্বালাতেন৻ এখন এখানকার বেশীর ভাগ দোকানেই সোলার বাতি রয়েছে৻
বলা বাহুল্য নিঝুম দ্বীপে তারের বিদ্যুত নেই৷ অধিকাংশ ঘরেই এখনও কেরোসিনের কুপি বা হারিকেল জ্বলে৷ একটু অবস্থাসম্পন্নরা সৌর বিদ্যুতের ব্যাবস্থা করছেন৷
বাড়ীতে সোলার বাতি দেখাতে নিয়ে গেলেন বন্দরটিলা বাজারের দোকানী শাহনাজ উদ্দিন৷ স্ত্রী শামসুন নাহার আর পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার৻
“আমি রান্নাবান্না করি লাকড়ির চুলোয়ম`` জানালেন শামসুন নাহার, ‘‘বাড়ীর আশেপাশের গাছ-গাছড়া কেটে এই লাকড়ি নিয়ে আসি৻ শহরে আমি যাই না৻ জীবনে একবারই গেছি৻ গাড়ীতে চড়েছি দুইবার৻``
নিঝুম দ্বীপের জনসংখ্যা বিশ থেকে পঁচিশ হাজার ৻ এদের অধিকাংশেরই পেশা কৃষি৻ তারা মূলত ধানচাষ করেন৻
bukhari
ফজলুল করিম বুখারী বলছেন জলোচ্ছ্বাসই মূল সমস্যা৻
এ বছর ধান কেমন হয়েছে, জিজ্ঞেস করতেই একজন কৃষক জানালেন, ফলন এবার একদম ভাল হয়নি৻ আইলার পরে জমিতে নোনা পানি ঢুকেছে৻ এজন্য ফসল কম হচ্ছে৻
নিঝুম দ্বীপে রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকদের দলনেতা ফজলুল করিম বুখারী ৩২ বছর আগে এখানে এসে বসতি গড়েছিলেন৷
তিনি বলছেন, পানিটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিঝুম দ্বীপের জন্য৻ এবার আইলার সময় যে ঝড়ে হয়েছে তাতে বাতাসের গতিবেগ কম থাকলেও, প্রায় দশ ফুট উচুঁ পর্যন্ত পানি উঠেছে৻
বুখারী জানালেন দ্বীপের ২৫ হাজার মানুষের জন্য ছোট বড় নটি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র৷
“একেকটা কেন্দ্রে পাঁচশো বা ছয়শো লোক আশ্রয় নিতে পারে, কিন্তু দেখা গেছে সেখানে এক বা দেড় হাজার লোক থাকে৻ সেই সেন্টারে থাকাও আমাদের জন্য আরেক কষ্ট৻ মহিলা পুরুষ সবাই মিলে গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়,`` তিনি বললেন, ‘‘বাঁচার জন্যই শুধু সেখানে আমরা যাই৻ আসলে এখানে বাঁচার জন্য বেড়ীবাঁধ প্রয়োজন৻ বেড়ী বাঁধ ছাড়া জানের কোন নিরাপত্তা নেই৻``
দ্বীপের একমাত্র উচু মাটির রাস্তাটি মে মাসের জলোচ্ছাসে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে৷ মালামাল টানার জন্য কিছুটা পথ রিক্সাভ্যান চলে, তাও দু তিনজন মিলে ঠেলতে হয়৻
shoal
সাগরের বুকে নতুন চর
হাতিয়ার পথে নৌকোঘাটে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম যে জনপদে এখনও চলাফেরা পায়ে হেটে বা নৌকোয়৷ চাষাবাদ হালের বলদ দিয়ে৷ বাতি জ্বলে সৌর বিদ্যুতে৷
যে চরের একজন গৃহবধু সারাজীবনে একদিন মোটরগাড়ী চড়েছেন -- ঝড় ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচতে একটা বেড়ী বাঁধের জন্য তাদের দাবী কি খুব বেশী ?

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা

No comments:

Post a Comment