Saturday, February 13, 2010

উপকূলীয় অবকাঠামো জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়

বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব অবকাঠামো রয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় তা যথেষ্ট নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলের ১৭ শতাংশ এলাকাকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোর উচ্চতা আরও সাড়ে চার ফুট বাড়াতে হবে। উপকূলীয় পোল্ডারগুলোর (লবণপানি আটকানোর জন্য তৈরি অবকাঠামো) নকশা পাল্টে মেরামত ও নতুন পোল্ডার তৈরি করার জন্য ৩১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে চালানো সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: সাম্প্রতিক গবেষণা ফলাফল’ শীর্ষক এক সেমিনারে লব্ধ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন আয়োজক সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) বিজ্ঞানীরা। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক এমাদউদ্দিন জাতিসংঘের সাম্প্রতিক গবেষণা ও আলোচনার ফলাফলের উদাহরণ টেনে বলেন, পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ স্থায়ী উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে।
গবেষণা ফলাফল থেকে আরও দেখা গেছে, নদীর আচরণের পরিবর্তন ও পানি বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুর ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটির অবকাঠামোগুলো আগের মতো কাজ করছে না। এই প্রকল্প দুটির নকশায় পরিবর্তন এনে সংস্কার করা প্রয়োজন। উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে পটুয়াখালী ও বরিশালে লবণাক্ততার পরিমাণ দুই থেকে সাত পিপিটি (পানির লবণাক্ততা পরিমাপক) হয়ে গেছে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পানির পলি পরিবহনক্ষমতা বেড়ে গিয়ে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
আইডব্লিউএমের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১৯৯৮ সালের পর থেকে দেশে বন্যাপ্রবণ এলাকার পরিমাণ ১৮ শতাংশ বেড়েছে। চট্টগ্রাম শহরে খাওয়ার পানি সরবরাহের উত্স হালদা নদীর পানির লবণাক্ততার পরিমাণ আট পিপিটি পর্যন্ত বেড়েছে। পরিশোধনের অযোগ্য হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে খাওয়ার পানি সরবরাহে সংকট দেখা দেবে। উপকূলের ১৪টি শহর জলোচ্ছ্বাস এবং পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের ৩৪টি শহর বন্যার ঝুঁকির মধ্যে আছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করা এবং সেগুলোর উচ্চতা বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। টেন্ডার ডাকা হয়ে গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আইলা ও সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মেরামতের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি কর্মপরিকল্পনা করেছে উল্লেখ করে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষতির জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে অতিরিক্ত সহায়তা চাইবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ওয়াহিদ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহিরকান্তি মজুমদার ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হিবোগার্ড জেনসান। সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কারিগরি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।

No comments:

Post a Comment