Saturday, February 13, 2010

পরিবেশের নায়কেরা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রিয় পৃথিবী যখন বিপন্ন, তখন মানুষকে পরিবেশসচেতন করে পৃথিবীকে বিপর্যয়ের হাত থেকে ফেরাতে কাজ করছেন কিছু মানুষ। কদিন আগে বিখ্যাত টাইম সাময়িকী তেমনি কিছু মানুষকে ‘হিরোজ অব দ্য এনভায়রনমেন্ট’ খেতাবে ভূষিত করেছে। এমন কিছু মানুষের কথা জানাচ্ছেন মাহফুজ রনী। রাষ্ট্রপতি
মোহাম্মদ নাশিদ

দীর্ঘ স্বৈরশাসনের জাল থেকে বেরিয়ে আসার পর সমুদ্রঘেরা ছোট্ট মালদ্বীপের দায়িত্ব কাঁধে নেন মোহাম্মদ নাশিদ। ৪২ বছর বয়েসী এই রাষ্ট্রনায়ক ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন ও উপকূলীয় সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছিলেন। সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান জলরাশির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা মালদ্বীপবাসীকে নিশ্চিন্তে নিজ বাসভূমে বসবাসের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য পরিবেশ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। আগামী দশ বছরের মধ্যে মালদ্বীপকে সম্পূর্ণ কার্বনমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট কতগুলো পরিকল্পনা হাতে নেন এই নেতা।

পদার্থবিজ্ঞানী

ডেভিড কিথ

অ্যাটোমিক অপটিকস নিয়ে পড়াশোনা করলেও পৃথিবীর ক্রমাগত বিপন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতি পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড কিথকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছিল। কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এই বিজ্ঞানী জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গবেষণা শুরু করেন শিক্ষতার শুরু থেকেই। জীবপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে উদ্ভাবন করেন অভিনব এক যন্ত্র। ওজোন স্তর ও ভূপৃষ্ঠের জন্য হুমকিস্বরূপ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কিংবা কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, এমন আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। পরিবেশবিদেরা তাঁর আবিষ্কারের পর সবকিছু নিয়ে ফের নতুন করে চিন্তা করতে শুরু করেছেন।

যুবরাজ

প্রিন্স মোস্তাফা জাহের

১৯৭৩ সালে প্রিন্স মোস্তাফা জাহের দেশের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ইতালিতে চলে যান সপরিবারে। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ২০০৪ সালে সেই দায়িত্ব ফেলে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নতুন গঠিত সরকারের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির পরিচালকের দায়িত্ব নেন সাগ্রহে। এর পর থেকেই তিনি আফগানিস্তানের পরিবেশ আইন নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য কাজ শুরু করেন। ২৫ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেন অল্প সময়ে। ৪৬ বছর বয়সী প্রিন্স মোস্তাফা স্বপ্ন দেখেন, তাঁর হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে ফিরিয়ে আনবেন, সবুজে ভরে উঠবে আফগানিস্তান।

অভিনেত্রী

ক্যামেরন ডায়াজ

হলিউডের এই তারকা অভিনেত্রী শুধু অভিনয়ের বৃত্তে আটকে রাখেননি নিজেকে। পৃথিবীর বিপন্ন পরিবেশকে রক্ষার জন্য কাজ করেছেন কিকিং অ্যান্ড স্ক্রিমিং নামের একটি পাঁচ মিনিটের চলচ্চিত্রে। টেলিভিশনের পর্দায় ট্রিপ্পিন নামের শোতে তুলে ধরেছেন পরিবেশ রক্ষার কথা। অংশ নিয়েছেন আর্থ কনসার্টে। নিজের হাইব্রিড কার নিয়ে ঘুরেছেন দেশের আনাচকানাচে। সাধারণ জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, কী করে আমরা আমাদের এই প্রিয় পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। নিজের জনপ্রিয়তাকে এভাবেই পরিবেশ রক্ষার কাজে লাগিয়েছেন ক্যামেরন ডায়াজ।

ব্লগার

জো রম

পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন জো রম। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কাজ শুরু করেন রকফেলার ফাউন্ডেশনে। তখন থেকেই পরিবেশের ক্ষয়ে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে লিখতে শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৬ সালে মিসিসিপিতে হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে তাঁর ভাই প্রাণ হারান। প্রকৃতির এমন ভয়াবহ রূপ দেখে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন ৪৯ বছরের জো রম। ব্লগে হাত খুলে লিখতে শুরু করেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় সরকার এবং ছাপোষা বিজ্ঞানীদের ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লেখেন গুরুত্বপূর্ণ অনেক লেখা। নিজের সেই লেখার মাধ্যমে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য প্রতিটি মানুষকে পরিবেশসচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন জো রম।

উদ্ভাবক

বিন্দেশ্বর পাথক

মানুষের মলমূত্র পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত অবহেলিত সম্প্রদায়টির জন্য কিছু একটা করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। একসময় ভাবনাটাকে কাজে পরিণত করেন তিনি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মলত্যাগ করা কোটি জনগণের জন্য তিনি স্বল্প খরচে দুই গর্তবিশিষ্ট শৌচাগার উদ্ভাবন করেন। সুলভ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি তাঁর সেই উদ্ভাবনকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ৬৬ বছর বয়স্ক পাথক তাঁর কাজের ফলও পেয়েছেন অচিরেই। বছর খানেকের মধ্যেই যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের ফলে যেসব রোগ ও সমস্যার সৃষ্টি হতো, তা কমে গেল উল্লেখযোগ্য হারে। শুধু দেশেই নয়, তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাঁর সেই শৌচাগারের সুবিধা পেল খুব তাড়াতাড়ি।

আলোকচিত্রী

ইয়ান আরথাস-বার্ট্রান্ড

‘আমি আমার তোলা ছবির মাধ্যমে সবাইকে দেখাতে চাই, আমাদের আঘাতে প্রিয় পৃথিবী ভালো নেই, অসংখ্য ক্ষতে ভরে গেছে এই গ্রহটি।’ আকাশ থেকে ক্যামেরায় প্রিয় পৃথিবীর নাজুক পরিবেশের ছবি তুলে এভাবেই পৃথিবীবাসীকে সচেতন করে তোলাটাকে ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফ্রান্সের ৬৩ বছর বয়স্ক ইয়ান আরথাস-বার্ট্রান্ড। ইউনেস্কোর সহযোগিতায় তাঁর তৈরি আর্থ ফ্রম অ্যাবোভ তথ্যচিত্রটি পৃথিবীর ১২০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছে, তাঁর তোলা ছবির বই ২৪টি ভাষায় প্রকাশিত হওয়ার পরে বিক্রি হয়েছে তিন মিলিয়ন কপি। তবে তাঁর যাবতীয় কাজের মধ্যে এ বছর হোম নামের একটি তথ্যচিত্র ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ৫৪টি দেশের কোটি মানুষ তাঁর সেই কাজ দেখেছে বিনা পয়সায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত পৃথিবীকে দেখে মানুষ বুঝতে শিখছে, এখনই সময় বিপর্যয় ঠেকানোর।

1 comment:

  1. ”পরিবেশের নায়কেরা“ এই ফিচারটি আমার কাছে খুব ভাল লাগলো। এছাড়া প্রতিটি ফিচারই আমার কাছে দারুণ লেগেছে। ভালোকে তো ভাল বলতেই হবে।

    ReplyDelete