শেষ পর্যন্ত এই-ই হলো। দুনিয়াকে যারা বিষিয়ে তুলেছে, যারা জলবায়ুর বিপর্যয় ঘটিয়েছে, তারা কোপেনগেহেনে জড়ো হয়েছে এটাই বলার জন্য যে, বৈজ্ঞানিক হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করে তারা তাদের জ্বালানো-পোড়ানো চালিয়ে যাবে। বিশ্ব রক্ষায় তারা কোনো চুক্তিতে সই করতে না পারলেও বিশ্বের নিচু দ্বীপগুলো, হিমবাহগুলো, উত্তর মেরু এবং কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যে তারা মৃত্যুর সিলমোহর মেরে দিয়েছে।
আমরা যারা খোলা চোখে জলবায়ু সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তারা অবাক হইনি। প্রতিদিনই বিজ্ঞানীমহল, উন্নয়নশীল দেশ ও বিক্ষোভকারীরা পৃথিবীকে তাতিয়ে তোলা গ্যাস নিঃসরণ কমানোয় অনেক বাস্তব ও চৌকস সমাধানের কথা তুলেছে। কিন্তু উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সরকারগুলো ভেটো দিয়ে সেগুলোকে এক দাগে বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকে বাঁচাতে আমাদের প্রয়োজন সেগুলো আবার তুলে ধরা।
বাতিল হওয়া প্রথম সমাধান: একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করা। কোপেনহেগেনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টি দেশগুলোর মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো সরকার প্রতিশ্রুতি না রাখলে কোনো শাস্তি হবে না, কেবল মৌখিক কিছু নিন্দা ছাড়া। কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেও কানাডা নিঃসরণ বাড়িয়েছিল ২৬ শতাংশ। কিন্তু কেউ তাদের কিছু বলেনি। কোপেনহেগেনের পর এ জাতীয় ঘটনা শত শত ঘটতে থাকবে।
কিন্তু বলিভিয়ার সাহসী প্রতিনিধিরা এটা মানতে পারেননি। তাঁরা দেখেছেন, কীভাবে তাঁদের হিমবাহগুলো ভয়ঙ্কর গতিতে গলছে। তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, সত্যিকারভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হলে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আদালত এবং পরিবেশ পুলিশ সৃষ্টি করতে হবে; তাদের হাতে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। কিন্তু এমন প্রস্তাব অবাস্তব। আমাদের নেতারা কেবল একটা বিষয়েই নাছোড়, সেটা হলো বাণিজ্য, টাকা। কপিরাইট লঙ্ঘন করলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যেকোনো দেশকে কঠিন শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু পৃথিবীকে ধ্বংস করতে থাকলেতা বাধা দেওয়ার কেউ নেই, এই হলো আজব দুনিয়ার আজব নিয়ম। নিরাপদ জলবায়ু থেকে তাদের কাছে ট্রেড মার্কের মূল্য অনেক বেশি।
দ্বিতীয় সমাধান: জীবাশ্ম জ্বালানি তথা গ্যাস-তেল-কয়লাকে মাটির তলাতেই রেখে দেওয়া। উন্নত দেশের সরকারগুলোর ভণ্ডামি এখানেই যে, একদিকে তারা বলছে, তারা ব্যাপক হারে জ্বালানি পোড়ানো কমাতে চায়, অন্যদিকে নতুন নতুন খনি থেকে জ্বালানি তুলতে তারা মরিয়া। তাদের এক হাতে আগুনের অস্ত্র আর আরেক হাতে অগ্নিনির্বাপক—এ দুইয়ের কোনো একটি জিতবে। নেচার পত্রিকা বলছে, দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে চূড়ান্তভাবে আমরা কেবল আবিষ্কৃত তেল-গ্যাস-কয়লার ৬০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারব না। সুতরাং যেকোনো জলবায়ু চুক্তির গোড়াতেই চিরতরে নতুন করে জীবাশ্ম জ্বালানি অনুসন্ধান নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। ফ্রেন্ডস অব দি আর্থ সংগঠনের আন্তর্জাতিক সভাপতি নিমো বাসী যেমন বলেছেন, ‘কয়লা গহ্বরের ভেতরই থাকুক, তেল থাকুক মাটির তলায়।’ আমাদের নেতারা এই বিষয়টি আলোচনাতেই আনেননি।
তৃতীয় সমাধান: জলবায়ু ঋণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ৭০ শতাংশ দায়ী ধনী দেশগুলো। কিন্তু দুর্ভোগের ৭০ শতাংশই ভোগ করতে হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। হল্যান্ড সমুদ্রের প্লাবন ঠেকাতে বিরাট বিরাট বাঁধ বানাতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের নিয়তি কি কেবলই ডুবে যাওয়া? যে দায়ী, সে খেসারত দেবে না, নির্দোষই শাস্তি পাবে—এ কেমন নিষ্ঠুর বিধান?
আমাদের জলবায়ুর ঋণ তাই শুধতে হচ্ছে গরিব দেশগুলোকে। জলবায়ু সম্মেলনে এই প্রথমবারের মতো গরিব দেশগুলো ক্ষোভে উঠে দাঁড়াল। তাদের সম্মিলিত প্রতিনিধি ঘোষণা করলেন, ‘যে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হচ্ছে, তা দিয়ে আমাদের লাশগুলোর দাফনের খরচও উঠবে না।’ এত দিন বলা হতো পরিবেশবাদী আন্দোলন ধনীদের শৌখিনতা কিন্তু এবার তা গরিবদের বাঁচার আন্দোলনে পরিণত হলো। অন্যদিকে কোপেনহেগেন সম্মেলনের প্রধান বিতর্ক হয়ে উঠল, সামান্য যেটুকু গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবী সহ্য করতে পারবে, সেটুকু ব্যবহারের অধিকার কার হবে? ধনী দেশগুলোকে বুঝতে হবে, তারা তাদের কোটা শেষ করে ফেলেছে। এর পরও জলবায়ু ঋণের ধারণা তারা মানতে রাজি নয়। কীভাবে তারা আশা করে, যেখানে তারা ন্যায়বিচারের প্রাথমিক যুক্তিটিও মানতে চাইছে না, সেখানে কীভাবে গরিব দেশগুলো তাদের তৈরি ঘোষণায় আস্থা রাখবে? কেন গরিবেরাই সব সইবে?
যারা ওপরে বলা এই সমাধানগুলো অবাস্তব বলে আখ্যা দেয়, তারা নিজেরাই অবাস্তবতার মধ্যে আটকে আছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলব, কিন্তু সভ্যতা হেসে-খেলে চলতে থাকবে, তা হয় না। ধনী দেশগুলোর পছন্দের ‘পুষিয়ে নেওয়া’, কার্বন-বাণিজ্য কিংবা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন সংগ্রহ করার মতো পদ্ধতিগুলো কোনো কাজেই আসবে না। সত্যিকার ওই সমাধানগুলোই পারে পৃথিবীকে আবার শীতল করতে। তার জন্য আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের পিতা-পিতামহরা এর চেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন।
জলবায়ু সম্মেলন চলার পুরোটা সময় নিচুভূমির দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এসব বাস্তব সমাধান জীবনরক্ষার ভেলার মতো আঁকড়ে ধরে ছিলেন। কারণ, তাঁরা জানেন, সমুদ্রের ঢল থেকে তাঁদের দেশ ও মানুষকে বাঁচানোর এটাই পথ। এই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। তাঁরা সবাই ছিলেন গম্ভীর ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ, তাঁদের চোখে ছিল বিষণ্নতা। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর দাবি নিয়ে তাঁরা কোপেনহেগেনে এসেছিলেন। তাঁরা প্রবল চেষ্টা করে গেছেন, নিজেদের দাবির পক্ষে ব্যবহার করেছেন জটিল বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্ব এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসাময় কবিতা ও গান। কিন্তু সবকিছুই উপেক্ষিত হলো।
পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন জ্বালানি-ব্যবস্থায় আমাদের বেশি কর দিতে হবে আর কম চড়তে হবে প্লেনে। এর পরও আমরা সুখী ও প্রাচুর্যময় জীবন যাপন করতে পারব। জলবায়ু বিপর্যয়মুক্ত পৃথিবীতে সত্যিকারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেবল তেল-গ্যাস করপোরেশনগুলো আর পেট্রো-ডলারপুষ্ট স্বৈরতন্ত্রগুলো।
কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদেরা এই সুস্থ পথে হাঁটলেন না। ভবিষ্যতে টিকে থাকার নিশ্চয়তার বদলে তাঁরা বেছে নিলেন কম কর আর তেলের মুনাফার পথ।
ব্রিটেনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট থেকে নেওয়া: ইংরেজি থেকে অনুবাদ ফারুক ওয়াসিফআমরা যারা খোলা চোখে জলবায়ু সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তারা অবাক হইনি। প্রতিদিনই বিজ্ঞানীমহল, উন্নয়নশীল দেশ ও বিক্ষোভকারীরা পৃথিবীকে তাতিয়ে তোলা গ্যাস নিঃসরণ কমানোয় অনেক বাস্তব ও চৌকস সমাধানের কথা তুলেছে। কিন্তু উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সরকারগুলো ভেটো দিয়ে সেগুলোকে এক দাগে বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকে বাঁচাতে আমাদের প্রয়োজন সেগুলো আবার তুলে ধরা।
বাতিল হওয়া প্রথম সমাধান: একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করা। কোপেনহেগেনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টি দেশগুলোর মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো সরকার প্রতিশ্রুতি না রাখলে কোনো শাস্তি হবে না, কেবল মৌখিক কিছু নিন্দা ছাড়া। কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেও কানাডা নিঃসরণ বাড়িয়েছিল ২৬ শতাংশ। কিন্তু কেউ তাদের কিছু বলেনি। কোপেনহেগেনের পর এ জাতীয় ঘটনা শত শত ঘটতে থাকবে।
কিন্তু বলিভিয়ার সাহসী প্রতিনিধিরা এটা মানতে পারেননি। তাঁরা দেখেছেন, কীভাবে তাঁদের হিমবাহগুলো ভয়ঙ্কর গতিতে গলছে। তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, সত্যিকারভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হলে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আদালত এবং পরিবেশ পুলিশ সৃষ্টি করতে হবে; তাদের হাতে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। কিন্তু এমন প্রস্তাব অবাস্তব। আমাদের নেতারা কেবল একটা বিষয়েই নাছোড়, সেটা হলো বাণিজ্য, টাকা। কপিরাইট লঙ্ঘন করলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যেকোনো দেশকে কঠিন শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু পৃথিবীকে ধ্বংস করতে থাকলেতা বাধা দেওয়ার কেউ নেই, এই হলো আজব দুনিয়ার আজব নিয়ম। নিরাপদ জলবায়ু থেকে তাদের কাছে ট্রেড মার্কের মূল্য অনেক বেশি।
দ্বিতীয় সমাধান: জীবাশ্ম জ্বালানি তথা গ্যাস-তেল-কয়লাকে মাটির তলাতেই রেখে দেওয়া। উন্নত দেশের সরকারগুলোর ভণ্ডামি এখানেই যে, একদিকে তারা বলছে, তারা ব্যাপক হারে জ্বালানি পোড়ানো কমাতে চায়, অন্যদিকে নতুন নতুন খনি থেকে জ্বালানি তুলতে তারা মরিয়া। তাদের এক হাতে আগুনের অস্ত্র আর আরেক হাতে অগ্নিনির্বাপক—এ দুইয়ের কোনো একটি জিতবে। নেচার পত্রিকা বলছে, দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে চূড়ান্তভাবে আমরা কেবল আবিষ্কৃত তেল-গ্যাস-কয়লার ৬০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারব না। সুতরাং যেকোনো জলবায়ু চুক্তির গোড়াতেই চিরতরে নতুন করে জীবাশ্ম জ্বালানি অনুসন্ধান নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। ফ্রেন্ডস অব দি আর্থ সংগঠনের আন্তর্জাতিক সভাপতি নিমো বাসী যেমন বলেছেন, ‘কয়লা গহ্বরের ভেতরই থাকুক, তেল থাকুক মাটির তলায়।’ আমাদের নেতারা এই বিষয়টি আলোচনাতেই আনেননি।
তৃতীয় সমাধান: জলবায়ু ঋণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ৭০ শতাংশ দায়ী ধনী দেশগুলো। কিন্তু দুর্ভোগের ৭০ শতাংশই ভোগ করতে হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। হল্যান্ড সমুদ্রের প্লাবন ঠেকাতে বিরাট বিরাট বাঁধ বানাতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের নিয়তি কি কেবলই ডুবে যাওয়া? যে দায়ী, সে খেসারত দেবে না, নির্দোষই শাস্তি পাবে—এ কেমন নিষ্ঠুর বিধান?
আমাদের জলবায়ুর ঋণ তাই শুধতে হচ্ছে গরিব দেশগুলোকে। জলবায়ু সম্মেলনে এই প্রথমবারের মতো গরিব দেশগুলো ক্ষোভে উঠে দাঁড়াল। তাদের সম্মিলিত প্রতিনিধি ঘোষণা করলেন, ‘যে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হচ্ছে, তা দিয়ে আমাদের লাশগুলোর দাফনের খরচও উঠবে না।’ এত দিন বলা হতো পরিবেশবাদী আন্দোলন ধনীদের শৌখিনতা কিন্তু এবার তা গরিবদের বাঁচার আন্দোলনে পরিণত হলো। অন্যদিকে কোপেনহেগেন সম্মেলনের প্রধান বিতর্ক হয়ে উঠল, সামান্য যেটুকু গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবী সহ্য করতে পারবে, সেটুকু ব্যবহারের অধিকার কার হবে? ধনী দেশগুলোকে বুঝতে হবে, তারা তাদের কোটা শেষ করে ফেলেছে। এর পরও জলবায়ু ঋণের ধারণা তারা মানতে রাজি নয়। কীভাবে তারা আশা করে, যেখানে তারা ন্যায়বিচারের প্রাথমিক যুক্তিটিও মানতে চাইছে না, সেখানে কীভাবে গরিব দেশগুলো তাদের তৈরি ঘোষণায় আস্থা রাখবে? কেন গরিবেরাই সব সইবে?
যারা ওপরে বলা এই সমাধানগুলো অবাস্তব বলে আখ্যা দেয়, তারা নিজেরাই অবাস্তবতার মধ্যে আটকে আছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলব, কিন্তু সভ্যতা হেসে-খেলে চলতে থাকবে, তা হয় না। ধনী দেশগুলোর পছন্দের ‘পুষিয়ে নেওয়া’, কার্বন-বাণিজ্য কিংবা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন সংগ্রহ করার মতো পদ্ধতিগুলো কোনো কাজেই আসবে না। সত্যিকার ওই সমাধানগুলোই পারে পৃথিবীকে আবার শীতল করতে। তার জন্য আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের পিতা-পিতামহরা এর চেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন।
জলবায়ু সম্মেলন চলার পুরোটা সময় নিচুভূমির দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এসব বাস্তব সমাধান জীবনরক্ষার ভেলার মতো আঁকড়ে ধরে ছিলেন। কারণ, তাঁরা জানেন, সমুদ্রের ঢল থেকে তাঁদের দেশ ও মানুষকে বাঁচানোর এটাই পথ। এই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। তাঁরা সবাই ছিলেন গম্ভীর ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ, তাঁদের চোখে ছিল বিষণ্নতা। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর দাবি নিয়ে তাঁরা কোপেনহেগেনে এসেছিলেন। তাঁরা প্রবল চেষ্টা করে গেছেন, নিজেদের দাবির পক্ষে ব্যবহার করেছেন জটিল বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্ব এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসাময় কবিতা ও গান। কিন্তু সবকিছুই উপেক্ষিত হলো।
পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন জ্বালানি-ব্যবস্থায় আমাদের বেশি কর দিতে হবে আর কম চড়তে হবে প্লেনে। এর পরও আমরা সুখী ও প্রাচুর্যময় জীবন যাপন করতে পারব। জলবায়ু বিপর্যয়মুক্ত পৃথিবীতে সত্যিকারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেবল তেল-গ্যাস করপোরেশনগুলো আর পেট্রো-ডলারপুষ্ট স্বৈরতন্ত্রগুলো।
কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদেরা এই সুস্থ পথে হাঁটলেন না। ভবিষ্যতে টিকে থাকার নিশ্চয়তার বদলে তাঁরা বেছে নিলেন কম কর আর তেলের মুনাফার পথ।
জোনাথন হারি: ব্রিটিশ সাংবাদিক।
< এই লেখাটি দৈনিক প্রথম আলোর 20.12.2009 তারিখের সংখ্যা থেকে নেওয়া হয়েছে >
No comments:
Post a Comment