Saturday, February 13, 2010

কোরান-হাদিসের আলোকে: সীমালংঘনের পরিণাম জলবায়ু বিপর্যয়

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবী সৃষ্টি করে প্রয়োজনানুসারে স্থানে স্থানে স্তরে স্তরে সব কিছুই সাজিয়ে রেখেছেন। মানবজাতির উপকারার্থে এবং শান্তির জন্য। যার ফলে পৃথিবী আপনগতিতে আবহমানকাল চলে আসছে। পৃথিবী অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল এবং এটাই আল্লাহর বিধান। আল্লাহুতাআলা বলেন, আর আমি তো তোমাদের দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তাতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি। তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সুরা আর রাফ-১০)
কালক্রমে দেখা যায় যে, এই পৃথিবীর মানুষ আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করে, নিজেদের মনের মত করে পৃথিবীতে চলতে ভালোবাসে। তাই আল্লাহতালার দেয়া সম্পদ ভান্ডার এবং নানা প্রকার উপকারী উপাদানের পরিবর্তন ঘটিয়ে, পৃথিবীতে সুখ-শান্তি চিরস্থায়ী করতে চেষ্টা করে। এতে উপকার হয়ে থাকে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহতাল্লার বিধানের সীমা লংঘন করে, তখন পৃথিবীতে মহা বিপর্যয় ঘটে এবং মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট ও ভোগান্তি হয়ে থাকে। যা বর্তমানে বিশ্বে নানা স্থানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পৃথিবীর খুব কম সংখ্যক দেশই বাকী, যেখানে গত এক বছরের মধ্যে হারিকেন, সাইক্লোন, অগ্নিবাতাস, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, সুনামী ও জলোচ্ছাস ইত্যকার কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানেনি। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সিডর নামক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের মহাতাণ্ডবের ব্যাপকতা লক্ষণীয়।

মহান আল্লাহুতালা পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, নদী- নালা, গাছ-বৃক্ষ, বন-জঙ্গল, তৃণ-লতা ও পশু-পাখি যথাস্থানে স্থাপন করেছেন মানুষের উপকারের জন্য অথচ মানুষ এদের সমূলে ধ্বংস করে। এদের উপকার পৃথিবী হতে বিদায় করে দেয়ার ফলে আজ জলবায়ুর পরিবর্তনে পৃথিবী মহা সমস্যার সম্মুখীন। তাই বিশ্বের চিন্তাশীল, দূরদর্শী, আবহাওয়াবিদ এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীগণ খুবই উদ্বিগ্ন।

মানুষের অপকর্মের জন্য যে বিপর্যয় আসে, এ সম্পর্কে মহান আল্লাহরাব্বুল আলামীন বলেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে ওদের কোন কোন কর্মের শাস্তি ওদের আস্বাদন করানো হয়, যাতে ওরা সৎপথে ফিরে আসে। (সুরা রূম-৪১)
পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনে যেসব দুর্যোগ ও মহাদুর্যোগের আর্বিভাব হয়েছে। এর জন্য আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর শিল্পোন্নত ও ধনী দেশ ও লোকেই বেশি দায়ী করেছেন, কেননা, তাদের গ্রীন হাউস গ্যাস এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনই এর জন্য দায়ী। তবে স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোতে গাছবৃক্ষ, পাহাড়-পর্বত ও বন-জঙ্গল ধ্বংস এবং নদী-নালার স্রোত পরিবর্তন ও নদ-নদীসমূহকে ভরাট করার জন্য কম দায়ী করেননি।

বহুল প্রচলিত দৈনিক ইত্তেফাকের গত ১৫ ডিসেম্বর, শনিবার ২০০৭ এ প্রথম পৃষ্ঠার একটি শিরোনামে এসেছে সতেরটি নদী হারিয়ে গেছে, মরে যাচ্ছে আটটি। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচয় মুছে দিতে পারে।

অতএব বাংলাদেশের মানুষের উচিত হবে সাহস ও উৎসাহ নিয়ে সকল প্রকার বিপর্যয়ের সম্মুখে ঘুরে দাঁড়ানো। যেমনভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মহাবিপর্যস্ত মানুষগুলো দেশ ও দশের সাহায্য নিয়ে আবারও নিজেদের কর্মজীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলেরা মাছ ধরছে এবং চাষীরা চাষে নেমে গেছে এবং অন্য কর্মজীবীরা তাদের কর্মে ফিরে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে আমাদের দেশে যে বিপর্যয় আসছে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং দেশকে সবুজ বনায়নে পরিণত করতে হবে, নদ-নদীকে ড্রেজিং এর মাধ্যমে সচল করতে হবে এবং পাহাড়-পর্বত ও বনজঙ্গল যাতে ধ্বংস না হয় এর ব্যবস্থা জনগণসহ দেশের সরকারকে এর দায়-দায়িত্ব নিতে হবে, তবেই তো দেশও বাঁচবে, জাতিও বাঁচবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহতালা কোন সম্প্রদায়ের অবস্থান পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন না করে। (সুরা রা’দ-১১)।

তিনি আরো বলেন ‘আর মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে। (সুরা নাজম-৩৯)

মানব অর্জিত বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্ববাসী এখন বদ্ধপরিকর। গত ৩ ডিসেম্বর সোমবার ২০০৭ এ ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শহর বালিতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়ে, ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার ২০০৭ এ শেষ হয়েছে। এতে ১৯২টি দেশের ১০ হাজার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞগণ যোগদান করেছিলেন। অনেক তর্কবিতর্কের পর বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দ একমত হয়েছেন যে, বিশ্বের বায়ু দোষণ রোধে এবং গ্রীন হাউস গ্যাস ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমিয়ে আনতে। ইহা বিশ্বের মানবজাতির জন্য এক বিশেষ শুভ সংবাদ

জলবায়ু দূষণ রোধে জাতিকে সচেতন হতে হবে। যেসব কারণে বায়ু দূষিত হয় তা প্রতিহত করতে হবে। নদ-নদীর পানির স্রোতযাতে যথাযথভাবে প্রবাহিত হতে পারে এর সুব্যবস্থা করতে হবে। তা হলেই দেশসমূহ বিপদ হতে বাঁচতে পারবে। সর্বশেষ কথা হলো যে, আল্লাহর বিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা কোন জনমানুষের নেই। যে কোন বিধান লংঘনই বিপর্যয় ডেকে আনবে।

1 comment:

  1. Really, Its a great blog site to save us from the risk of climate change. But, it would be good if include some important articles on climate change. So lets move to save our motherland.

    ReplyDelete