অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের একটি কুফল হলো বিভিন্ন আগ্নেয়গিরিতে ঘন ঘন অগ্ন্যুত্পাত ও ভূমিকম্প। অবশ্য এ নিয়ে বিতর্ক আছে। কয়েক বছর ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা চলছে। সম্প্রতি হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতিতে যে ওলটপালট লক্ষ করা যাচ্ছে, ভূমিকম্পও কি তাহলে তারই একটি রুদ্র রূপ? সাধারণত আশঙ্কা করা হয়, বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো-কার্বনসহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস জমা হওয়ায় ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বাড়ছে। এর ফলে মেরু অঞ্চলের জমাটবাঁধা বরফ গলে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু উষ্ণতা বৃদ্ধি এক কথা আর ভূমিকম্প আরেক কথা। ভূমিকম্পের প্রধান কারণ হলো মাটির নিচে টেকটনিক প্লেটের আপেক্ষিক স্থান পরিবর্তনের সময় দুই প্লেটের ঘর্ষণ। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে মাটির নিচে টেকটনিক প্লেটের ঘর্ষণের সম্পর্ক থাকার আশঙ্কা কতটুকু, সেটাই হচ্ছে আসল প্রশ্ন। কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমশৈলীগুলো গলে পানি হয়ে গেলে ওই এলাকায় ভূপৃষ্ঠের ওপর বরফখণ্ডের চাপ কমে যাবে আর অন্যদিকে বিভিন্ন সমুদ্রে পানির চাপ বাড়বে। এই পরিবর্তনের ফলে মাটির নিচে টেকটনিক প্লেটের ওপর চাপের তারতম্য ঘটবে। ফলে মাটির নিচে তাদের চলাফেরা ঠিক আগের মতো হবে না। এতে আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা বৃদ্ধি ও ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে বরফখণ্ড অপসৃত হলে ভূমধ্যসাগর, এন্টার্কটিকা ও ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের আগ্নেয়গিরি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, বরফখণ্ডের চাপে ভূমিকম্প অবদমিত থাকে। তাই বরফ গলতে থাকলে অতীতের বরফ যুগের অবসানের পরবর্তী পরিস্থিতির পুনরাবির্ভাব ঘটতে পারে। এতে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। তবে এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। এখনো গবেষণা চলছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment