আজ পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখা যাবে, পৃথিবীজুড়েই বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও হারিকেনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া হারাচ্ছে তার স্বকীয়তা। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ হারাচ্ছে তার ষড়্ঋতুর খেলা, একেবারেই হারিয়ে গেছে দুই ঋতু শরত্ ও হেমন্ত। নেই বর্ষার সময় বৃষ্টি, নেই শীতের সময় শীত (এ বছরের শীত বহুদিনের মধ্যে ব্যতিক্রম)। মনে হচ্ছে, একটি ঋতু গ্রীষ্মই যেন এখন প্রভাব বিস্তার করে আছে।
এ দৃশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে উষ্ণতা। আর এসব অবস্থার জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। বর্তমানে বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে, যা এখন আর অনুমান বা গবেষণার বিষয় নয়। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করার জন্য মাটি খনন করে ছোট-বড় জলাশয় সৃষ্টি করতে। সম্প্রতি তিনি স্টকহোমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এর প্রভাবে বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষি এবং কৃষকের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য দলমত-নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে সেচব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলেছেন।
পৃথিবীর খাদ্য পরিস্থিতির বিবেচনায় দেশের মানুষের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য দেশের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য উত্পাদন বাড়াতে হবে। খাদ্য উত্পাদনের জন্য যেমন জমির সর্বোত্তম ব্যবহার প্রয়োজন, তেমনি ফসল উত্পাদনের জন্য যথাসময়ে বীজ, সেচ ও সার সরবরাহ আবশ্যক। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, এখনো বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে গভীর নলকূপের পানি দিয়ে সেচব্যবস্থা করা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১২ হাজার গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে এ অঞ্চলে পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্রভূমি এখন ক্লান্ত, বিষণ্ন।
বরেন্দ্র অঞ্চলে দেশের অন্য অংশের চেয়ে বৃষ্টিপাত অনেক কম। বরেন্দ্র অঞ্চলের সমভূমির উচ্চতা ১২ মিটার হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু এলাকার উচ্চতা ৪৫ মিটার পর্যন্ত রয়েছে। তাই বরেন্দ্র অঞ্চল বন্যামুক্ত। বৃষ্টি কম এবং বন্যামুক্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানি পুনর্ভরণ হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে উচ্চ বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট নিচে, ২০০০ সালে তা ৬২ ফুটে নেমে যায়। মধ্য বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সালে পানির স্তর ছিল ২৭ ফুট নিচে, ২০০০ সালে তা নামে ৪০ ফুটে। নিম্ন বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সালে পানির স্তর ছিল ২০ ফুট নিচে, ২০০০ সালে তা নামে ২৯ ফুটে। এ পরিস্থিতি বর্তমান সময়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
রাজশাহীর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গত বর্ষার ১ আষাঢ় থেকে ১২ শ্রাবণ পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে ২৭৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এই বৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে এলাকাভেদে। ২০০৮ সালের জুন মাসে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার। ওই বছরের জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৩২ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এমনিতেই রাজশাহী অঞ্চলে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম বৃষ্টি হয়ে থাকে। ওই বছরের জুন মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চলের পরিবেশে অস্বাভাবিকতা বিরাজ করছে। মে ও জুন মাসে বেশ কয়েকবার রাজশাহী অঞ্চলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। অস্বাভাবিক এই আবহাওয়া পরিস্থিতি এ অঞ্চলের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, বন ও মত্স্য সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। একদিকে কৃষিতে ফসলের উত্পাদনপ্রক্রিয়ায় যেমন প্রভাব পড়েছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়েছে। দরিদ্র মানুষ ভাপসা গরম ও পানিবাহিত রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনাবৃষ্টির ফলে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও উন্মুক্ত জলাশয়গুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
এ জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর লাগাতারভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে জমি শুষ্ক হচ্ছে, হ্যান্ড টিউবওয়েলে এমনকি তারাপাম্পেও পানি ওঠে না। সেচকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহারের কারণে ভূমির ওপরের স্তর লৌহ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা দূষিত হচ্ছে। ফলে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ছে। কৃষকের ব্যয় বাড়ছে, আর সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চল ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৭৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি ব্যবহার করে সেচসুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর অতিশয় নির্ভরতা কমবে এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির আধার পুনর্ভরণে সহায়ক হবে। পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে আসবে।
এই প্রকল্পটি নিয়ে এখন বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে জনসভা, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক করে আসছে। বরেন্দ্রের সর্বস্তরের মানুষ চায় পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচব্যবস্থা গড়ে উঠুক। বর্তমানে দলমত-নির্বিশেষে মেয়র, সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, আদিবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষ খরা মৌসুম আসার আগেই সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে। উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকায় খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার্থে গঙ্গা ব্যারাজ এবং উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প গ্রহণ অতীব জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলকে রক্ষার জন্য উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আশু পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
মো. জামাত খান: আহ্বায়ক, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ।এ দৃশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে উষ্ণতা। আর এসব অবস্থার জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। বর্তমানে বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে, যা এখন আর অনুমান বা গবেষণার বিষয় নয়। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করার জন্য মাটি খনন করে ছোট-বড় জলাশয় সৃষ্টি করতে। সম্প্রতি তিনি স্টকহোমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এর প্রভাবে বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষি এবং কৃষকের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য দলমত-নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে সেচব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলেছেন।
পৃথিবীর খাদ্য পরিস্থিতির বিবেচনায় দেশের মানুষের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য দেশের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য উত্পাদন বাড়াতে হবে। খাদ্য উত্পাদনের জন্য যেমন জমির সর্বোত্তম ব্যবহার প্রয়োজন, তেমনি ফসল উত্পাদনের জন্য যথাসময়ে বীজ, সেচ ও সার সরবরাহ আবশ্যক। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, এখনো বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে গভীর নলকূপের পানি দিয়ে সেচব্যবস্থা করা হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১২ হাজার গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে এ অঞ্চলে পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্রভূমি এখন ক্লান্ত, বিষণ্ন।
বরেন্দ্র অঞ্চলে দেশের অন্য অংশের চেয়ে বৃষ্টিপাত অনেক কম। বরেন্দ্র অঞ্চলের সমভূমির উচ্চতা ১২ মিটার হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু এলাকার উচ্চতা ৪৫ মিটার পর্যন্ত রয়েছে। তাই বরেন্দ্র অঞ্চল বন্যামুক্ত। বৃষ্টি কম এবং বন্যামুক্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানি পুনর্ভরণ হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে উচ্চ বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট নিচে, ২০০০ সালে তা ৬২ ফুটে নেমে যায়। মধ্য বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সালে পানির স্তর ছিল ২৭ ফুট নিচে, ২০০০ সালে তা নামে ৪০ ফুটে। নিম্ন বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯১ সালে পানির স্তর ছিল ২০ ফুট নিচে, ২০০০ সালে তা নামে ২৯ ফুটে। এ পরিস্থিতি বর্তমান সময়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
রাজশাহীর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গত বর্ষার ১ আষাঢ় থেকে ১২ শ্রাবণ পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে ২৭৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এই বৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে এলাকাভেদে। ২০০৮ সালের জুন মাসে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার। ওই বছরের জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৩২ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এমনিতেই রাজশাহী অঞ্চলে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম বৃষ্টি হয়ে থাকে। ওই বছরের জুন মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চলের পরিবেশে অস্বাভাবিকতা বিরাজ করছে। মে ও জুন মাসে বেশ কয়েকবার রাজশাহী অঞ্চলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। অস্বাভাবিক এই আবহাওয়া পরিস্থিতি এ অঞ্চলের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, বন ও মত্স্য সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। একদিকে কৃষিতে ফসলের উত্পাদনপ্রক্রিয়ায় যেমন প্রভাব পড়েছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়েছে। দরিদ্র মানুষ ভাপসা গরম ও পানিবাহিত রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনাবৃষ্টির ফলে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও উন্মুক্ত জলাশয়গুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
এ জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর লাগাতারভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে জমি শুষ্ক হচ্ছে, হ্যান্ড টিউবওয়েলে এমনকি তারাপাম্পেও পানি ওঠে না। সেচকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহারের কারণে ভূমির ওপরের স্তর লৌহ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা দূষিত হচ্ছে। ফলে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ছে। কৃষকের ব্যয় বাড়ছে, আর সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চল ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৭৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি ব্যবহার করে সেচসুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর অতিশয় নির্ভরতা কমবে এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির আধার পুনর্ভরণে সহায়ক হবে। পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে আসবে।
এই প্রকল্পটি নিয়ে এখন বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে জনসভা, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক করে আসছে। বরেন্দ্রের সর্বস্তরের মানুষ চায় পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচব্যবস্থা গড়ে উঠুক। বর্তমানে দলমত-নির্বিশেষে মেয়র, সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, আদিবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষ খরা মৌসুম আসার আগেই সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে। উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকায় খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার্থে গঙ্গা ব্যারাজ এবং উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প গ্রহণ অতীব জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলকে রক্ষার জন্য উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আশু পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, তাং ১৪-০১-২০১০
No comments:
Post a Comment