জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে রোপা আমন, আমন, আউশ, পাটসহ কৃষি ফসলের শতকরা ৭০ ভাগ ফলনহানির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। যে সময় বর্ষা বা বৃষ্টি হবার কথা সে সময় না হয়ে শরতকালে অতিবৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে কৃষি সেক্টরে এই ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। শরতের মাঝামাঝিতে আমন ধানের থোড় হবার কথা কিন্তু জমিতে পানি না থাকায় অনেক এলাকায় ধান শুকিয়ে মারা গেছে। এদিকে সরকার খরার কারণে আমন চাষ যাতে বিঘি্নত না হয় সেজন্য উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র এলাকায় কৃষকদের বিনামূল্যে সাড়ে নয় হাজার গভীর নলকূপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সেচ সুবিধা দিয়ে রোপা আমনের আওতায় আনে। অনেক কাঠ খর পুড়িয়ে কৃষক রোপা আমনের চাষ আবাদ শুরু করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি আর বন্যায় উত্তরাঞ্চলের নিচু এলাকায় রোপা আমন তলিয়ে যাচ্ছে। এরূপ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা না গেলে আগামীতে আমন, আউশ, পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষক। দেশে অনাবৃষ্টি আর বন্যার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করা না গেলে ৭০ ভাগ পর্যন্ত ফসলহানির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্ট ও কৃষি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অনাবৃষ্টির সময় সরকার কৃষি ফলনের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাড়ে নয় হাজার গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানোর জন্য প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তবে সেটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও সাময়িকভাবে কৃষক রোপা আমনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। ৫০ ভাগ সেচ কার্যক্রম সফল হলেও নতুন করে বন্যা আর বৃষ্টির কারণে কৃষক এখন উদ্বিগ্ন। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, এখন বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে শরত ঋতু চলছে। তারপরে শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি। এদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে বন্যা সবমিলে কৃষি সেক্টরে এখন নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। শ্রাবণ মাসে চলতি রোপা আমন ফসলের বীজ রোপণের ক্ষেত তৈরি করতে সরকারের দেয়া বিনামূল্যে সেচের উপর নির্ভর করতে হয়। বিনামূল্যে সেচ থেকে রোদের আগুন থেকে আমন বীজতলা রক্ষা করা গেলেও বর্তমানে বন্যা আর অতিবৃষ্টির অব্যাহত থাকলে আমন, রোপা আমন চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর সারাদেশে ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বরেন্দ্র এলাকার ১৬ জেলায় ২৬ লাখ হেক্টর জমিতে এবার আমন চাষ করা হবে। আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দেড় লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে পানি ছিল না ক্ষেতে। সে সময় পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিত্তীর্ণ এলাকায় আমন চাষের জমি এখনও পতিত পড়ে আছে। আমন চাষাবাদ মূলত প্রকৃতি-বৃষ্টির পানি নির্ভর। তবে উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানির চাহিদা মেটানো হলেও দক্ষিণাঞ্চলে সে সুযোগ নেই। এ অঞ্চলে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ নদীর জো এবং বৃষ্টির পানিতে আমন চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু পানির অভাবে কৃষক জমিতে হালচাষ করতে পারছে না। অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলেও বর্তমানে বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে।
প্রয়োজনের সময় পানি না পেয়ে আমন চারা রোপণ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল কৃষকরা। অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতে পারলেও অধিকাংশ দরিদ্র কৃষক তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলেই অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চারা রোপণের জন্য এ সময় অন্তত ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের সব নলকূপের পানি দিয়ে রোপা আমনের চাষবাদ করলে এখন তা তলিয়ে যাচ্ছে। এসব জেলার ভাদ্রেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এখনও ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে আছে। এ সময় পানির স্তর নিচে থাকা উদ্বেগজনক।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় ১১ হাজার ৮৩৭টি গভীর নলকূপের মধ্যে নয় হাজার ৪৭০টি নলকূপে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। আমন আবাদে সেচের জন্য অতিরিক্ত ২৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও সরবরাহ করা হয়। এজন্য প্রায় তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে। এ টাকা সরকার সরাসরি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে প্রদান করে। ফলে এ নিয়ে কৃষকদের কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না। যেসব কৃষক শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দিবে তাদের বিষয়ে সরকার পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবে। এসব তথ্য জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে মোট আট কোটি চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বর্ষা মৌসুমেও খরা চলায় আমন আবাদে বিঘ্ন ঘটছে। আমন আবাদে কৃষকদের সহায়তা করতে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে সেচযন্ত্র চালু করে কৃষকেরা মাঠে নামতে শুরু করে। তবে সেচযন্ত্রের পানিতে চাষ করা উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হয় বলে চাষিরা জানিয়েছে। কারণ অধিকাংশ সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় সেচ খরচও অনেক বেশি পড়ে। সরকার খরা মোকাবেলায় সেচ সুবিধা দিয়ে রোপা আমনের আওতায় আনলেও সেটা এখন ভেস্তে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা ইরি-বোরো চাষাবাদ করে বাম্পার ফলন ঘরে তুলেছেন। কিন্তু তারা সঠিক দাম না পাওয়ায় নিরাশ হয়েছেন। এ কারণে অনেক কৃষক এবারে আমন আবাদ করবেন কিনা চিন্তায় পড়েন। গত ২৫ জুন ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের ১৪টি জেলার আউশ ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। এতে এ অঞ্চলের কৃষকদের মেরুদ- ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমন চাষে আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু পানি না থাকায় আমন চাষ নিয়েও হতাশায় কাটাতে হয়। আবার পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় কোন কোন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানিতে ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ কারণে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাকৃতিক পানি ছাড়া কোনভাবেই কৃত্রিম সেচ দিয়ে আমন ধানের জমিতে পানির চাহিদা মেটানো যায় না। আর তাই কৃষকরা বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এছাড়া জলাশয়ভিত্তিক মিঠাপানির মৎস্য চাষও হুমকির মুখে পড়ে। জলবায়ুর এরূপ বৈরী ভাব অব্যাহত থাকলে আমন চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আইলার পর উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্ট হয়েছিল। সেটি বাংলাদেশের স্থলভাগে না আসায় প্রত্যাশিত বৃষ্টি হয়নি। এরপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কয়েক দিন যেতে না যেতেই উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরেকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আবহাওয়ার নিয়মানুযায়ী মেঘ নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশে জমা হয়। এটির প্রভাবে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৪শ' মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতে ঘাটতি দেখা দেয়। এবার বাংলাদেশে ভাল বর্ষণ বর্ষ (গুড মনসুন ইয়ার) নয়। আকাশে এখন শরত কালের মতো সাদা সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। জুলাই মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৯২ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদরা জানান, সার্বিক জলবায়ুর ওপর এল নিনোর প্রভাবে এ বছর কোন স্থানে খরা, কোন স্থানে বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি দেখা দেয়। এর ফলে বিশ্বে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি আর বন্যায় উত্তরাঞ্চলের নিচু এলাকায় রোপা আমন তলিয়ে যাচ্ছে। এরূপ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা না গেলে আগামীতে আমন, আউশ, পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষক। দেশে অনাবৃষ্টি আর বন্যার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করা না গেলে ৭০ ভাগ পর্যন্ত ফসলহানির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্ট ও কৃষি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অনাবৃষ্টির সময় সরকার কৃষি ফলনের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাড়ে নয় হাজার গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানোর জন্য প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তবে সেটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও সাময়িকভাবে কৃষক রোপা আমনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। ৫০ ভাগ সেচ কার্যক্রম সফল হলেও নতুন করে বন্যা আর বৃষ্টির কারণে কৃষক এখন উদ্বিগ্ন। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, এখন বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে শরত ঋতু চলছে। তারপরে শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি। এদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে বন্যা সবমিলে কৃষি সেক্টরে এখন নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। শ্রাবণ মাসে চলতি রোপা আমন ফসলের বীজ রোপণের ক্ষেত তৈরি করতে সরকারের দেয়া বিনামূল্যে সেচের উপর নির্ভর করতে হয়। বিনামূল্যে সেচ থেকে রোদের আগুন থেকে আমন বীজতলা রক্ষা করা গেলেও বর্তমানে বন্যা আর অতিবৃষ্টির অব্যাহত থাকলে আমন, রোপা আমন চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর সারাদেশে ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বরেন্দ্র এলাকার ১৬ জেলায় ২৬ লাখ হেক্টর জমিতে এবার আমন চাষ করা হবে। আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দেড় লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে পানি ছিল না ক্ষেতে। সে সময় পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিত্তীর্ণ এলাকায় আমন চাষের জমি এখনও পতিত পড়ে আছে। আমন চাষাবাদ মূলত প্রকৃতি-বৃষ্টির পানি নির্ভর। তবে উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানির চাহিদা মেটানো হলেও দক্ষিণাঞ্চলে সে সুযোগ নেই। এ অঞ্চলে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ নদীর জো এবং বৃষ্টির পানিতে আমন চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু পানির অভাবে কৃষক জমিতে হালচাষ করতে পারছে না। অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলেও বর্তমানে বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে।
প্রয়োজনের সময় পানি না পেয়ে আমন চারা রোপণ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল কৃষকরা। অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতে পারলেও অধিকাংশ দরিদ্র কৃষক তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলেই অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চারা রোপণের জন্য এ সময় অন্তত ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের সব নলকূপের পানি দিয়ে রোপা আমনের চাষবাদ করলে এখন তা তলিয়ে যাচ্ছে। এসব জেলার ভাদ্রেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এখনও ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে আছে। এ সময় পানির স্তর নিচে থাকা উদ্বেগজনক।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় ১১ হাজার ৮৩৭টি গভীর নলকূপের মধ্যে নয় হাজার ৪৭০টি নলকূপে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। আমন আবাদে সেচের জন্য অতিরিক্ত ২৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও সরবরাহ করা হয়। এজন্য প্রায় তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে। এ টাকা সরকার সরাসরি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে প্রদান করে। ফলে এ নিয়ে কৃষকদের কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না। যেসব কৃষক শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দিবে তাদের বিষয়ে সরকার পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবে। এসব তথ্য জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে মোট আট কোটি চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বর্ষা মৌসুমেও খরা চলায় আমন আবাদে বিঘ্ন ঘটছে। আমন আবাদে কৃষকদের সহায়তা করতে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে সেচযন্ত্র চালু করে কৃষকেরা মাঠে নামতে শুরু করে। তবে সেচযন্ত্রের পানিতে চাষ করা উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ হয় বলে চাষিরা জানিয়েছে। কারণ অধিকাংশ সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় সেচ খরচও অনেক বেশি পড়ে। সরকার খরা মোকাবেলায় সেচ সুবিধা দিয়ে রোপা আমনের আওতায় আনলেও সেটা এখন ভেস্তে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা ইরি-বোরো চাষাবাদ করে বাম্পার ফলন ঘরে তুলেছেন। কিন্তু তারা সঠিক দাম না পাওয়ায় নিরাশ হয়েছেন। এ কারণে অনেক কৃষক এবারে আমন আবাদ করবেন কিনা চিন্তায় পড়েন। গত ২৫ জুন ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের ১৪টি জেলার আউশ ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। এতে এ অঞ্চলের কৃষকদের মেরুদ- ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমন চাষে আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু পানি না থাকায় আমন চাষ নিয়েও হতাশায় কাটাতে হয়। আবার পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় কোন কোন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানিতে ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ কারণে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাকৃতিক পানি ছাড়া কোনভাবেই কৃত্রিম সেচ দিয়ে আমন ধানের জমিতে পানির চাহিদা মেটানো যায় না। আর তাই কৃষকরা বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এছাড়া জলাশয়ভিত্তিক মিঠাপানির মৎস্য চাষও হুমকির মুখে পড়ে। জলবায়ুর এরূপ বৈরী ভাব অব্যাহত থাকলে আমন চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আইলার পর উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্ট হয়েছিল। সেটি বাংলাদেশের স্থলভাগে না আসায় প্রত্যাশিত বৃষ্টি হয়নি। এরপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কয়েক দিন যেতে না যেতেই উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরেকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আবহাওয়ার নিয়মানুযায়ী মেঘ নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশে জমা হয়। এটির প্রভাবে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৪শ' মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতে ঘাটতি দেখা দেয়। এবার বাংলাদেশে ভাল বর্ষণ বর্ষ (গুড মনসুন ইয়ার) নয়। আকাশে এখন শরত কালের মতো সাদা সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। জুলাই মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৯২ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদরা জানান, সার্বিক জলবায়ুর ওপর এল নিনোর প্রভাবে এ বছর কোন স্থানে খরা, কোন স্থানে বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি দেখা দেয়। এর ফলে বিশ্বে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment