Thursday, February 11, 2010

জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় করতে হবে

পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমানের বিশেষ সাক্ষাত্কার 

জন্ম ১৯৫০ সালে। আদিবাড়ি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায়। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নবিজ্ঞানে। ১৯৭৩ সালে মাস্টার্স করার পর কিছুদিন তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৪ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ১৯৭৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রায় দেড় দশক যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। ড. আতিক রহমান নোবেল বিজয়ী জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেল—আইপিসিসির সদস্য। তিনি জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ পদক ২০০৮’ পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

সাক্ষাত্কার গ্রহণ: ফিরোজ জামান চৌধুরী

প্রথম আলো  ৭-১৮ ডিসেম্বর কোপেনহেগেনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আতিক রহমান  ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনের একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইউএনএফসিসি (ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) প্রতিবছর জলবায়ু নিয়ে একটি করে সন্মেলন করে থাকে। কিন্তু কোপেনহেগেন সম্মেলনে এবার সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা উপস্থিত থাকবেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, এর প্রভাব ও করণীয় নিয়ে গভীর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। সিদ্ধান্তটা হবে মূলত অর্থনৈতিক। ২০০৭ সালে আইপিসিসি (ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) সুস্পষ্টভাবে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন যে হচ্ছে তা অবধারিত এবং এ পরিবর্তনে প্রকৃতির চেয়ে মানুষের ভূমিকাই প্রধান। এর কতগুলো চরম প্রতিক্রিয়া আমরা দেখছি। এ সম্মেলনের মূল কথা হচ্ছে, গ্রিনহাউস গ্যাস অনেক কমাতে হবে। এখন কে কমাবে, কীভাবে কমাবে, সেটার মীমাংসা করতে হবে। বলা হচ্ছে, যে সব দেশ বেশি মাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে শিল্পোন্নত দেশ হয়েছে, তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের প্রায় পুরোটা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি শিল্পোন্নত দেশ।
প্রথম আলো  কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে আমাদের চাওয়াটা কী হওয়া উচিত?
আতিক রহমান  প্রথমত একটা কথা খুব সুস্পষ্টভাবে বোঝা দরকার, এখানে কোনো একটি দেশের বিষয়ে আলোচনা হবে না। এখানে সমষ্টিগত স্বার্থ দেখা হবে। এ সম্মেলনের মূল চিন্তা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রধান প্রধান সমস্যা খুঁজে বের করা, সবার স্বার্থ দেখা এবং সমাধানযোগ্য পথ খুঁজে বের করা। বিশ্বকে কীভাবে বাঁচানো যায়, এখানে সে বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ একা কিছু চাইতে পারবে না। সামগ্রিকভাবে চাইতে হবে। সেখানে বলতে হবে, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এই এই করতে হবে। এত টাকা প্রয়োজন।
প্রথম আলো  বাংলাদেশ নিজ থেকে কি নিজের সমস্যার কথা বলতে পারবে না?
আতিক রহমান  আপনাআপনিই বাংলাদেশের কথা উঠে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের যে দৃষ্টিতে দেখা হয়, যারা সবচেয়ে দরিদ্র এবং যারা সবচেয়ে নাজুক, দুটোতেই বাংলাদেশ পড়ে। বাংলাদেশ যে আলোচনাটা ওখানে করতে পারে, তা হলো, দরিদ্র দেশগুলো সবাই মিলে একটা বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যারা, সেখানেও বাংলাদেশ আছে, সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ দেশ যারা, সেখানেও বাংলাদেশ আছে। উপকূলীয় দেশ হিসেবেও বাংলাদেশ আছে। সুতরাং বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সুবিধা পেতে পারে। আবার জায়গার তুলনায় জনসংখ্যাও আমাদের দেশে বেশি। সে জন্য পৃথিবীর সব দেশেরই বাংলাদেশের জন্য একটা সহানুভূতি আছে।
প্রথম আলো  কোপেনহেগেন সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি কি পর্যাপ্ত?
আতিক রহমান  বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুব খারাপ নয়। স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান করা হয়েছে। এটা আগে থেকেই বাংলাদেশ করে রেখেছে। তা এ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তুতি মোটামুটি ঠিক আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এ সম্মেলনে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন, তিনি সবার পক্ষ হয়েও বলবেন, দেশের কথাও বলবেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের যে অর্থনৈতিক সহায়তা দরকার, সেটার কথাও হয়তো তিনি বলবেন। এ সম্মেলনে দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আলাদা ফান্ড তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রথম আলো  কোন কোন দেশ এই ফান্ডে অর্থ যোগান দেবে?
আতিক রহমান  যাদের ক্ষমতা আছে, তারা ফান্ড দেবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী দেশগুলোকে এই ফান্ড দিতে হবে। এটা তারা অঙ্গীকার করেছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো ধরিত্রী সম্মেলনে তা স্বাক্ষর করা হয়েছে এবং সেখানে সুস্পষ্টভাবে দেশগুলোর নাম লেখা আছে। আমেরিকা, কানাডা, সমগ্র ইউরোপ, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ শিল্পোন্নত দেশগুলো এই ফান্ডে কন্ট্রিবিউট করবে।
প্রথম আলো  জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে কী ধরনের প্রভাব আপনি লক্ষ করছেন?
আতিক রহমান  ঘূর্ণিঝড়ের কথাই ধরুন। আগে ঘূর্ণিঝড় হতো ১০ বা ১৫ বছর পর। কিন্তু এখন হচ্ছে প্রায় প্রতিবছর। সিডর, আইলা, নার্গিস—তিন তিনটি বড় ঘূর্ণিঝড় দুই বছরের মধ্যে এ এলাকা দিয়ে বয়ে গেল। যখন একটা ঘূর্ণিঝড় আসে, তখন সব ভেঙেচুরে যায়। ধুয়ে নিয়ে যায়। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। প্রচুর সম্পদের ক্ষতি হয়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়।
প্রথম আলো  জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
আতিক রহমান  সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে ছোট দ্বীপ, উপকূলীয় অঞ্চল এবং শুষ্কায়িত অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন মালদ্বীপ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে মালদ্বীপ ডুবেই যাবে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট তাঁর কেবিনেটের মিটিং করেছেন পানির নিচে। সারা পৃথিবীকে তিনি প্রতীকী অর্থে দেখাতে চেয়েছেন, তাঁরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। যেসব দেশে দরিদ্রর সংখ্যা বেশি, তাদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে তারা বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রথম আলো  গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো কি এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না?
আতিক রহমান  অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকায় তারা তা মোকাবিলা করতে পারছে, এই বিবেচনায় তাদের কম ক্ষতি হচ্ছে। যেমন ধরুন, আমাদের উপকূলীয় এলাকা, যখন একটা বন্যা আসে তখন সম্পূর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। লন্ডন শহরেও বন্যা আসে। টেমস নদীতে বাঁধ দেওয়া রয়েছে বলে তাদের সেভাবে ক্ষতি হয় না। শুধু তা-ই নয়, নেদারল্যান্ডসে বাঁধই নয়, পুরো সমুদ্র উপকূল ড্যাম দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে ড্যাম দেওয়া আছে, সমুদ্র থেকে নয় মিটার নিচেও জমিজমা ঘরবাড়ি আছে। তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
প্রথম আলো  নেদারল্যান্ডসের মতো আমরা কি ড্যাম দিয়ে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল বাঁচাতে পারি না?
আতিক রহমান  সেটা সম্ভব নয়। কারণ এটা ব্যয়বহুল এবং আমাদের উপকূলীয় এলাকা বিশাল। তাই আপতত সে চিন্তা না করাই ভালো।
প্রথম আলো  সব মহল থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। আপনার দৃষ্টিতে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
আতিক রহমান  প্রথমত বাংলাদেশের সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বে। আইপিসিসি বলেছে, ১০০ বছরের মধ্যে অর্থাত্ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৮৬ সেন্টিমিটার। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু দ্রততমভাবে গলছে। অংকে যে গতিতে বরফ গলবে ধরা হয়েছিল, তার চেয়েও অনেক বেশি দ্রুততর বেগে গলছে। হিমালয়ের মতো পর্বতমালাও গলছে। ফলে এটি বেড়ে এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে যেতে পারে। ২১০০ সালের অনেক আগেই, ৫০ বছরের মধ্যে এক মিটার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ জমি লবণাক্ত পানি দ্বারা আবিষ্ট হয়ে যাবে। এতে ১৩ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার পরিমাণ প্রায় দুই কোটি। পানির নিচে ডুবে গেলে তাদের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার মানে তাকে অন্য কোথাও যেতে হবে। এটা এক দিনে হবে না, ধীরে ধীরে হবে। ফলে তারা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে।
আরেকটি ক্ষতি হবে, সেটা হচ্ছে বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা। ২০০ কিংবা ৫০০ বছর ধরে বৃষ্টিপাতের যে ধরন ছিল, তা বদলে যাবে এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। গ্রামের মানুষ একটা অভ্যাসের সঙ্গে পরিচিত ছিল, কোন সময় কতটা বৃষ্টি হবে, সে বিষয়ে তাদের একটা পূর্বপ্রস্তুতি ছিল; কোন কোন সময়ে কী ফসল তারা করবে, তার প্রস্তুতি নিতে পারত। এখন সবই অনিশ্চয়তায় ভরা। ফলে অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির শিকার হচ্ছে আমাদের কৃষকেরা। তাদের প্রচলিত জ্ঞান তাদের আর কাজে লাগছে না। ফলে আমাদের কৃষি খাতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও ঘনত্ব বাড়বে। সিডর, আইলা ও নার্গিসের মতো ঘূর্ণিঝড় আগে ১০ থেকে ১৫ বছর পর পর আসত। এখন প্রায় প্রতিবছর আসছে এবং এগুলোর গতিও বাড়ছে।
প্রথম আলো  উন্নত বিশ্ব কি বাংলাদেশের সমূহ বিপদের কথা জানে?
আতিক রহমান  হ্যাঁ, তারা অবগত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে জিরো গ্রাউন্ড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বলা হচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের ক্ষতির আশঙ্কা অনেক বেশি।
প্রথম আলো  কোপেনহেগেনের আলোচনায় দরিদ্র দেশগুলোর জন্য কী পরিমাণ ফান্ড থাকার সম্ভাবনা রয়েছে?
আতিক রহমান  এই মুহূর্তে বলা হচ্ছে, যা আলোচনা হয়েছে, ২০২০ পর্যন্ত প্রতিবছর পৃথিবীতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি জলবায়ু ফান্ড গঠন করা হবে। মানে মোট এক হাজার বিলিয়ন ডলারের একটা কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কোপেনহেগেন সম্মেলনে। তবে এই টাকা খরচের সঠিক খাত দেখাতে হবে, খরচের পরিকল্পনা দেখাতে হবে, যোগ্যতাও থাকতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করতে হবে। এই যে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হচ্ছে, এর অর্ধেক কার্বন মার্কেট তৈরি করতে ব্যবহূত হবে। কার্বনের একটা বাজার তৈরি হবে।
প্রথম আলো  কেমন হবে সেই বাজার?
আতিক রহমান  ধরুন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি গরিব ও উন্নয়নশীল দেশ এমন কোনো কাজ করবে, তাতে পৃথিবীর উপকার হবে, যে পদ্ধতিতে কার্বন নিঃসরণ কম হবে, তেমন কোনো পদ্ধতি বাজারজাতকরণে এই টাকা ব্যয় হবে। আমরা যদি প্রত্যেক বাড়িতে সোলার বিদ্যুত্ ব্যবহার করি, তাতে কার্বন নিঃসরণ হবে না; এ রকম কোনো পদ্ধতি বাজারজাতকরণ বা এ ধরনের অন্য কোনো সৃজনশীল উদ্যোগের জন্য টাকার যোগান দেওয়া হবে। কার্বনের ব্যবহার কমাবে এমন যেকোনো উদ্যোগে এই টাকা ব্যয় হবে। আমরা কাঠ পুড়িয়ে বা গ্যাস পুড়িয়ে পানি গরম করছি, আলো জ্বালাচ্ছি, তাতে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, যাতে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে পারলে আমরা বলতে পারব, এভাবে আমরা এতটা কার্বন ডাই-অক্সাইড কমাচ্ছি। তখন এই খাতে পয়সা দেওয়ার কথা ভাবা হবে। পাশ্চাত্য দেশগুলো এ ধরনের খাতে নতুন বাজার তৈরির জন্য পয়সা দিতে আগ্রহী। কার্বন নিঃসরণ কমানোর এই বাজার আন্তর্জাতিক বাজার হয়ে উঠতে পারে। বিলিয়ন ডলারের বাজার অচিরেই ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার হয়ে উঠবে।
প্রথম আলো  এই বাজারের সবটাই কি কার্বনসংক্রান্ত হবে?
আতিক রহমান  কার্বন বাজার ছাড়াও কিছু টাকা অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হবে, যা দুর্যোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ বা এ রকম আরও কিছু। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সচেতনা সৃষ্টির জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকতে পারে।
প্রথম আলো  এখন চীন ও ভারত বেশি মাত্রায় শিল্পায়ন করছে। ফলে তারাও এখন বেশি মাত্রায় কার্বন নির্গমন করছে। তাদের অবস্থা কী?
আতিক রহমান  শুধু চীন আর ভারত নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের অবস্থানও তাদের কাছাকাছি। তারা বলছে, এখন আমাদের শিল্পায়ন প্রয়োজন। তারা বলছে, জনসংখ্যা মাথাপিছু হিসেবে এই চার দেশ তেমন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করছে না, যতটা করছে উন্নত দেশগুলো। তাদেরও বিকল্প পথ খুঁজতে বলা হবে। তাদেরও দায়ী দেশগুলোর তালিকায় আনতে চায় উন্নত দেশগুলো। কিন্তু এই চার দেশ বলছে, আমরা পয়সা তো দেবই না, বরং আমাদেরই পয়সা দাও, যেন আমরা এমন কার্যক্রম হাতে নিতে পারি, যাতে কম গ্রিনহাউস গ্যাস উত্পন্ন হয়। উন্নয়নশীল আরও কিছু দেশও এ অবস্থানে রয়েছে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশ যেহেতু সব দিক দিয়েই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, সুতরাং ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী বাংলাদেশ জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ বরাদ্দ পাবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সেই টাকা খরচের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে কি না?
আতিক রহমান  এ জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকার ও সহায়ক বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একসঙ্গে কাজ করায় সমস্যাও আছে। এর নিয়ন্ত্রক কে হবে? জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়বে অনেক মন্ত্রণালয়। পরিবেশ, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য প্রভৃতি মন্ত্রণালয় এবং আরও কিছু দপ্তর। এককভাবে কারও পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই অনেকে প্রস্তাব করেছেন, সমন্বয়সাধনের জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় করা প্রয়োজন। এর নাম হতে পারে ‘জলবায়ু পরিবর্তন-ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়’। বিষয়টি সরকার গভীরভাবে ভেবে দেখতে পারে।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
আতিক রহমান  ধন্যবাদ। 

< সাক্ষাৎকারটি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ০৬-১২-২০০৯ তারিখে প্রকাশিত ;

No comments:

Post a Comment